বিশেষ প্রতিনিধিঃ
কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচরে ঋণের টাকা মওকুফের জন্য প্রীতি রানী সরকারকে হত্যা করা হয়েছে বলে প্রতির বাবা-মার দাবি । পরে মরদেহ ফাসিঁতে ঝুলিয়ে আত্বহত্যা বলে অপপ্রচার চালাচ্ছে স্বামী ও শ্বশুড় বাড়ির লোকজন এমন অভিযোগ করেছেন প্রীতির বাবা বিনোদ সরকার ও তার পরিবার।
তিনি আরো জানান, তার মেয়েকে হত্যার আগে বেসরকারকারি উন্নয়ন সংস্থা এফএইচপি থেকে প্রীতির নামে স্বামী মিঠুন সরকার মোটা অংকের ঋণ নিয়েছেন । তাছাড়া তার মা স্বরসতী রানীর নামে ও এফএইচপি থেকে ঋন নিয়ে ছিলেন ।
এছাড়া অন্য একটি এনজিও সংস্থা থেকে মোটা অংকের ঋণ নিয়ে পরিশোধ করতে পারেনি মিঠুন । শুধু তাই নয় বিদেশ যাওয়ার নাম করে বাবার বাড়ি থেকে টাকা এনে দিতে অমানুষিক নির্যাতন চালাতো প্রীতির উপর । পরে নির্যাতন বন্ধে স্বামীকে কিছুদিন আগে ৫০ হাজার টাকা দেয় । তার পরেও মেয়ের শেষ রক্ষা হয়নি ।
অবশেষে গত (২৭ শে মার্চ) সন্ধ্যায় প্রীতিকে নির্যাতন করে হত্যা করে স্বামী ও শ্বশুড় বাড়ির লোকজন । তাছাড়াও বিয়ের সময় স্বামীকে নগদ ২ লাখ টাকা ও গয়নাগাটি দেয়ার পর ও বিদেশে যেতে আরো টাকা এনে দেয়ার জন্য প্রীতির উপর অমানুষিক নির্যাতন চালাতো।
আজ বৃহস্পতিবার (৩ আগষ্ট) সকালে বাংলাদেশ মফস্বল সাংবাদিক ইউনিয়ন ভৈরব শাখা কার্যালয়ে এসে সাংবাদিকদের কাছে এমনই অভিযোগ করে কান্নায় ভেঙে পড়েন প্রীতির বাবা বিনোদ সরকার । আর এভাবেই মেয়ের উপর অমানুষিক ঘটনার বর্ণণা দিতে গিয়ে বার বার কান্নায় ভেঙে পড়েন অসহায় এ বাবা । এ সময় তার প্রীতির গর্ভদারিনী মা বিপুলা রানী ও দাদী ঊষা রানী ও দাদা সুনীল সরকারসহ স্বজনরা মিডিয়া ও প্রশাসনসহ প্রধান মন্ত্রীর কাছে বিচার দাবী করেন ।
ঋন সংক্রান্ত অভিযোগের সত্যতা যাচাইয়ে বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থা এফএইচপি কুলিয়ারচর শাখায় খোজঁ নিয়ে জানাযায় মৃত্যুর পূর্বে প্রীতির নামে ২ লাখ টাকা ঋণ ছিলো । প্রীতির নামে নেওয়া ঋণ প্রীতি মারা যাওয়ার পর সংস্থাটি মওকুফ করে দিয়েছে । তবে স্বাভাবিক মৃত্যু হলে ঋণ মওকুফের নিয়ম থাকলেও প্রীতির মৃত্যু স্বাভাবিক অবস্থায় হয়নি । পুলিশ বলছে এ ঘটনায় কুলিয়ারচর থানায় অপমৃত্যু মামলা রুজু করা হয়েছে । তাহলে কিভাবে ঋণ মওকুফ করা হলো ?
এ বিষয়ে এফএইচপি কুলিয়ারচর শাখা ব্যবস্থাপক মাসুদ মিয়া জানান, ইউনিয়ন পরিষদ থেকে মৃত্যুর সনদ পেয়ে তারা ঋন মওকুফ করেছে ।
নিহত প্রীতির পরিবার আরো জানায় গত ২ বছর আগে ভৈরব রামশংকরপুর গ্রামের বিনোদ সরকারের কন্যা প্রীতি রানী সরকারকে পার্শ্ববতী কুলিয়ারচর রামদীর আগরপুরে গোপাল বিশ্বাসের পুত্র মিঠুন বিশ্বাসের সাথে সনাতন ধর্ম রীতি অনুযায়ী বিয়ে দেন । বিয়ের পর থেকে স্বামী ও শ্বশুড় বাড়ির লোকজন প্রীতিকে বাবার বাড়ি থেকে টাকা এনে দেওয়ার জন্য শারীরিক ভাবে নির্য়াতন করতো ।
অবশেষে গত ২৭ শে মার্চ সন্ধ্যায় প্রীতিকে শারিরীক নির্যাতনে হত্যা করে স্বামী ও শ্বশুড় বাড়ির লোকজন । হত্যাকে আত্বহত্যা বলে প্রচার করতে লাশ ঘরের বারান্দার রুমে ধর্ণার সাথে ঝুলিয়ে দেয় । পরে রাত ৮ টার দিকে আমাদেরকে জানায় প্রীতি আত্বহত্যা করেছে । কিন্ত প্রীতি আত্বহত্যা করেনি । তাকে মেরে ফেলা হয়েছে । কারন তার মুখে ও গলার নীচে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে । এ ঘটনায় কুলিয়ারচর থানায় হত্যা মামলা করতে গেলে পুলিশ আমাদের মামলা না নিয়ে একটি অপমৃত্যু মামলা রুজু করে ।
এ বিষয়ে নিহতের স্বামী মিঠুন বিশ্বাস কথা বলতে রাজি হয়নি । এ বিষয়ে নিহতের শ্বাশুড়ী স্বরসতী অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, স্বামী-স্ত্রীর মাঝে মধ্যে জগড়া ও কথা কাটাকাটি হয় । পরে স্বামী তার কর্মস্থলে চলে যায় । আর আমি নাতি নিয়ে আমার রুমে চলে আসি । হঠাৎ করে প্রায় আধা ঘন্টা পরে দেখতে পাই প্রীতির ঘরের দরজা বন্ধ । পরে জানালা ভেঙে ঘরের ধর্ণার সাথে ঝুলানো ফাসিঁ থেকে তাকে উদ্বার করে ভাগলপুর জহুরুল ইসলাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে সে মারা যায় ।
এ বিষয়ে কুলিয়ারচর থানার অফিসার ইনচার্জ ওসি মোহাম্মদ গোলাম মোস্তফা জানান, প্রীতি রানী সরকারের ঘটনায় প্রাথমিকভাবে থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা রুজু করা হয়েছে । তবে ময়নাতদন্তে যদি হত্যা প্রমাণিত হয় পরবর্তীতে হত্যা মামলা রুজু করে দোষীদের আইনের আওতায় আনা হবে ।
মোঃখায়রুল ইসলাম ভূইয়া
কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি
মোবাইল ০১৬১১৬৬৯৩৫৪.
সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত ২০২১. © হাওর টাইমস ২৪, এই ওয়েবসাইটের কোনো, লেখা, ইমেইজ, ভিডিও চিত্র, অডিও, অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ যোগ্য।