বিশেষ প্রতিনিধি, চট্টগ্রামঃ
চট্টগ্রাম নগরীর শুলকবহর জামিয়া মাদানিয়া মাদ্রাসায় ছাত্র বলাৎকারের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
বলাৎকারের শিকার শিক্ষার্থী শুলকবহর জামিয়া মাদানিয়া মাদ্রাসার হেফজ বিভাগের ছাত্র মোঃ নজরুল ইসলামের (১১) পিতা মোঃ মুছার পাঁচলাইশ থানায় করা সাধারণ ডায়েরি ও মুঠো ফোনে আলাপে জানা যায়।
অভিযোগ তুলে তিনি বলেন, গত ১১ আগষ্ট শুক্রবার আমার ছেলে নজরুল ইসলাম ওই মাদ্রাসার শিক্ষক হাফেজ আবুল কাশেম কর্তৃক বলাৎকারের শিকার হন। এই বিষয়টি মাদ্রাসা পরিচালক, শিক্ষক, পরিচালক ও তৎকালীন পাঁচলাইশ থানার অফিসার ইনচার্জ নাজিম উদ্দিন মজুমদারের মাধ্যমে মাদ্রাসার সম্মান রক্ষার্থে অভিযোগ করেও প্রত্যাহার পূর্বক বিষয়টি সুরাহা হয় এবং অভিযুক্ত শিক্ষক থানায় অপরাধ শিকার করায় অভিযুক্ত শিক্ষককে মাদ্রাসা থেকে বহিষ্কার করা হয়।
পরবর্তীতে গত শনিবার ২৩ সেপ্টেম্বর ওই মাদ্রাসার আরেক শিক্ষক মো : আব্দুল্লাহ আমার ছেলে নজরুল ইসলামের ক্লাস শিক্ষক না হয়েও তাকে ফুসলিয়ে ডেকে নিয়ে পূর্বের ঘটনার বিষয়ে জানতে চাপাচাপি করে এবং তা ভিডিও ধারণ করে। সেই ভিডিও মাদ্রাসা পরিচালক মাওলানা হারুনকে দেখিয়ে পূর্বের ঘটনা কোন ঘটনা নয়, সাজানো বলে মিথ্যা বলিয়া চালিয়ে দেওয়ার অপচেষ্টা করেন।
পরবর্তীতে মাদ্রাসা পরিচালক আমাকে মাদ্রাসায় ডেকে নিয়ে যায় এবং বলেন আপনার ছেলের সাথে কোন ধরনের ঘটনা অতিতে ঘটেনি বলে আপনার ছেলে বলছে। সে স্বীকার করেছে, যা আমাদের কাছে ভিডিও আছে ছেলের স্বীকারোক্তিতে। তখন আমি বললাম আগের ঘটনাটি আপনারা মাদ্রাসার সম্মানের স্বার্থে কাউকে না জানাতে এই বিষয়ে বাড়াবাড়ি না করতে জানিয়েছেন বিধায় ২/৩ হাজার ছাত্র ও দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বদনাম না রঠানোর জন্য, সুনাম রক্ষার্থে গোপন রাখতে বলেছিলেন। সেই হিসেবে আমার ছেলেকে কেউ কিছু জিজ্ঞেস করলে আমি এ বিষয়ে কোন কিছু কাউকে না বলতে বলি। এখন আপনারা যদি এসব নিয়ে পূনরায় ঘাটাঘাটি করেন তাহলে তো আমাকে ছেলের পড়ালেখা বন্ধ করে আইনের আশ্রয় নিতে হবে।
পরবর্তীতে মাদ্রাসা পরিচালক শিক্ষক আব্দুল্লাহকে তিরষ্কার করে এই বিষয়ে আর কোন ধরনের ঝামেলায় না জড়াতে নিষেধ করেন। পরবর্তীতে গত বৃহস্পতি ও শুক্রবার সাপ্তাহিক বন্ধ থাকায় আমি ছেলেকে বাসায় নিয়ে আসি এবং শনিবার ২৩ সেপ্টেম্বর পূনরায় সকালের দিকে বড় ছেলে শহীদুল ইসলামের মাধ্যমে মাদ্রাসায় পাঠাই। মাদ্রাসা থেকে ফিরে আমার বড় ছেলে আমাকে জানায় ছোট ভাই নজরুলের খাওয়া-দাওয়ার নিয়ম বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে মাদ্রাসায়। তখন আমি এ বিষয়ে মাদ্রাসার শিক্ষক পরিচালক তৈয়ব শাহ’র নিকট ফোনে জানতে চাইলে তিনি নাজেম হুজুরের সাথে কথা বলতে বলেন। উক্ত হুজুরের নাম্বার নিয়ে কথা বলতে চাইলে তিনি বিকেলে যোগাযোগ করতে বলেন। তিনি আবার ফোন করে বলেন, রাতে এশার নামাজের পর দেখা করতে। পরবর্তীতে আমি মাদ্রাসায় গিয়ে এ বিষয়ে জানতে চাইলে কোন হুজুররা এর সদুত্তর দিতে পারেন না। তৎক্ষণাৎ আমি মাদ্রাসা থেকে বাহিরে আসার সময় অভিযোগে উল্লেখিত হুজুর আবদুল্লাহ আমাকে ডেকে বলেন আপনার ছেলেকে মাদ্রাসা থেকে সরিয়ে নিন এবং আপনিও এলাকায় ছেড়ে চলে যান নয়তো আপনাদের সমস্যা হবে।
পরিস্থিতি সুবিধা মনে না হওয়ায় আমি তাৎক্ষণিক পাঁচলাইশ থানায় গিয়ে বিষয়টি অফিসার ইনচার্জ সন্তোষ কুমার চাকমাকে ঘটনার বিষয়গুলো বিস্তারিত বলি। ওই সময় আমার নিকট হতে তিনি মাদ্রাসা শিক্ষক পরিচালক তৈয়ব শাহ’র নাম্বার নিয়ে ফোনে কথা বলে থানায় দেখা করতে বলেন কিন্তু ওই সময় অপরপ্রান্ত থেকে তৈয়ব শাহ থানায় আসতে অপারগতা প্রকাশ করলে। আমি উনার পরামর্শে একটি সাধারণ ডায়েরি করি।
তখন বিষয়টি থানার অফিসার্স ইনচার্জের নির্দেশে থানার এসআই নুরুল আলম মিয়া আমাকে সাথে নিয়ে মাদ্রাসায় উপস্থিত হলে অভিযুক্ত আব্দুল্লাহ হুজুরকে ডাকলে তিনি সামনে এসে কথা বলতে অপারগতা জানান এবং মাদ্রাসা পরিচালকের নির্দেশ ছাড়া কোন কথা বলা যাবেনা বলে এড়িয়ে যান। ওই সময়ে বেশ কিছু গনমাধ্যম কর্মীরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হলে বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে, ছবি তুলতে গেলে, শিক্ষকদের উপস্থিতিতে মাদ্রাসা এলাকায় জুতা নিয়ে প্রবেশ ও ছবি তোলার কারনে জুতা ও ইট নিক্ষেপ করতে থাকে। একপর্যায়ে পুলিশ ও সাংবাদিকদের অবরুদ্ধ করে রাখে তারা। বিষয়টি থানাকে অবহিত করলে থানা থেকে অতিরিক্ত আইন শৃংখলা বাহিনীর লোক এসে আমাকেসহ পুলিশ ও সাংবাদিকদের উদ্ধার করে।
এই বিষয়ে মাদ্রাসা শিক্ষক পরিচালক তৈয়ব শাহ’র সাথে মুঠোফোনে কথা বলতে চাইলে এই প্রতিবেদকের সঙ্গে অশোভন আচরণ করেন।
এ বিষয়ে পাঁচলাইশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সন্তোষ কুমার চাকমার সাথে কথা বললে তিনি জানান, মাদ্রাসা ছাত্রের পিতা থানায় এসে বিস্তারিত জানালে একটি অভিযোগ করতে বলি। পরবর্তীতে অভিযোগের ভিত্তিতে থানা থেকে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষের কয়েকজনকে ডাকলে তারা না আসার কারণে এসআই নুরুল আলম মিয়াকে বাদীর সাথে দিয়ে ঘটনাস্থলে পাঠান। পরবর্তীতে জানতে পারলাম ঘটনাস্থলে জুতা নিয়ে গনমাধ্যম কর্মীরা প্রবেশ ও ছবি, ভিডিও ধারনের অজুহাতে সাংবাদিক ও পুলিশের উপর জুতা, ইট নিক্ষেপ করেছে ছাত্ররা। ধারনকৃত ছবি, ভিডিও ডিলেট করানো হয় এবং কিছু পুলিশ, সাংবাদিককে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে। বিষয়টি জানতে পেরে পরবর্তীতে অতিরিক্ত পুলিশ পাঠিয়ে অবরুদ্ধদের নিরাপদে সরিয়ে আনা হয়।
মাদ্রাসা পরিচালক ঢাকায় অবস্থান করায় এই বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। মাদ্রাসা পরিচালক ঢাকা থেকে ফিরলে এই বিষয়ে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষের সাথে বসে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করবো।
সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত ২০২১. © হাওর টাইমস ২৪, এই ওয়েবসাইটের কোনো, লেখা, ইমেইজ, ভিডিও চিত্র, অডিও, অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ যোগ্য।