নিজস্ব প্রতিনিধিঃ
রাষ্ট্রপতি পদে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে সাবেক জেলা ও দায়রা জজ, দুর্নীতি দমন কমিশনের সাবেক কমিশনার, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সর্বশেষ জাতীয় কাউন্সিলে নির্বাচন কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন কারী, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য বীরমুক্তিযোদ্ধা মো. সাহাবুদ্দিন চুপ্পুকে মনোনয়ন দিয়েছে।
জাতীয় সংসদে নিরঙ্কুশ একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকায় আওয়ামী লীগের প্রার্থীই হবেন দেশের পরবর্তী ২২ তম রাষ্ট্রপতি। জানা যায় প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা দলীয় প্রার্থী হিসেবে সাবেক জেলা ও দায়রা জজ ১৯৭৫ সালে সংঘটিত জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর নির্মম হত্যাকাণ্ডের পর কারা বরণ কারী মো. সাহাবুদ্দিন চুপ্পু’র নামই চূড়ান্ত করেছেন।
গত রোববার (১২ ফেব্রুয়ারী) দলের সাধারণ সম্পাদক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের নির্বাচন কমিশনে দলীয় প্রার্থী হিসেবে সাহাবুদ্দিন চুপ্পুর নাম দাখিল করেন। সংসদীয় দল আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাকে যে দায়িত্ব সর্বসম্মতিক্রমে অর্পন করছেন, সেই ক্ষমতাবলে এই মনোনয়ন প্রদান করেছেন বলে জানিয়েছেন ওবায়দুল কাদের।
আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে সাবেক জেলা ও দায়রা জজ মো. সাহাবুদ্দিন চুপ্পু নামের প্রস্তাবক ছিলেন ওবায়দুল কাদের। তাঁকে সমর্থন করেন দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদ।
ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে দলটির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মুহাম্মদ ফারুক খান, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদ, চিফ হুইপ নূর-ই আলম চৌধুরী লিটন, দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক সেলিম মাহমুদ ইসি ভবনে গিয়েছিলেন। চিফ হুইপ ও বিপ্লব বড়ুয়া আগে এসে ফরম পূরণ করেন।
সাহাবুদ্দিন চুপ্পু সাবেক জেলা ও দায়রা জজ এবং দুর্নীতি দমন কমিশনের কমিশনার ছিলেন। পরে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য করা হয় তাঁকে।
১৯৪৯ সালের ১০ ডিসেম্বর পাবনা শহরের সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন সাহাবুদ্দিন চুপ্পু। ১৯৮০ সালে আইন পেশায় যোগ দেন। ১৯৮২ সালে বিশেষ বিসিএস পরীক্ষার মাধ্যমে বিসিএস (বিচার) ক্যাডারের জন্য নির্বাচিত হয়ে তিনি মুন্সেফ (সহকারী জজ) পদে যোগ দেন। কর্মের ধারাবাহিকতায় তিনি যথাক্রমে যুগ্ম জেলা জজ, অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ এবং জেলা ও দায়রা জজ পদে দায়িত্ব পালন করে ২০০৬ সালে অবসরে যান। বিচারিক কাজের পাশাপাশি তিনি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পরিচালক হিসেবে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তাসহ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের ডেস্ক অফিসার হিসেবে দুই বছর দায়িত্ব পালন করেন। ২০১১ সালের ১৪ মার্চ তিনি দুর্নীতি দমন কমিশনের কমিশনার হিসেবে নিযুক্ত হন এবং ২০১৬ সালে অবসরে যান। বর্তমানে তিনি ইসলামি ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের পরিচালনা পর্ষদের ভাইস চেয়ারম্যান এবং এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
সাহাবুদ্দিন চুপ্পু ১৯৯৫ ও ১৯৯৬ সালে পরপর দুবার বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের কেন্দ্রীয় কমিটির মহাসচিব নির্বাচিত হন। ১৯৭১-৭৪ সালে তিনি পাবনা জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি, ১৯৭৪-৭৫ সালে পাবনা জেলা যুবলীগের সভাপতি ছিলেন। ১৯৭৫ সালে বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ (বাকশাল) গঠিত হলে তিনি পাবনা জেলা কমিটির যুগ্ম মহাসচিব মনোনীত হন। বঙ্গবন্ধু সপরিবারে শহীদ হলে সাহাবুদ্দিন চুপ্পুকে সামরিক আইনবলে গ্রেপ্তার করে অমানুষিক নির্যাতন করা হয়। দীর্ঘদিন কারাভোগের পর মুক্ত হয়ে তিনি পাবনা জেলা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক নির্বাচিত হন।
১৯৭১ সালের ৯ এপ্রিল মো. সাহাবুদ্দিন চুপ্পু ভারতে যান এবং প্রশিক্ষণ নিয়ে পাবনা জেলার বিভিন্ন অঞ্চলে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে সক্রিয়ভাবে যুদ্ধ করেন। তিনি ১৯৭২-৭৫ সালে পাবনা জেলা রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির মহাসচিব পদে থেকে স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে বন্যাদুর্গতদের মধ্যে ত্রাণ বিতরণে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন। পাবনা জেলা পরিবার পরিকল্পনা সমিতির তিনি কোষাধ্যক্ষ ছিলেন। তিনি পেশাগত জীবনে প্রথম দিকে সাংবাদিকতাও করেছেন। বর্তমানে তিনি পাবনা প্রেসক্লাব ও অন্নদা গোবিন্দ পাবলিক লাইব্রেরির আজীবন সদস্য।
সরকারি চাকরিতে থাকাকালীন ১৯৯৯ সালে সাহাবুদ্দিন চুপ্পু প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে ১০ সদস্যবিশিষ্ট টিমের সদস্য হিসেবে ‘আন্তর্জাতিক আইন সম্মেলন’-এ যোগদানের জন্য চীনের রাজধানী বেইজিংসহ চীনের বিভিন্ন প্রদেশ পরিদর্শন করেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পরিচালকের দায়িত্ব পালনকালে তিনি রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তাসংক্রান্ত বিভিন্ন সেমিনারে যোগদানের জন্য যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, সুইজারল্যান্ড সফর করেন। জাতিসংঘের অর্থায়নে এই সফর অনুষ্ঠিত হয় এবং এই সফরে সংসদ সদস্য, দেশরক্ষা বাহিনীর সদস্যসহ বেসরকারি আমলারাও অন্তর্ভুক্ত ছিল।
সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত ২০২১. © হাওর টাইমস ২৪, এই ওয়েবসাইটের কোনো, লেখা, ইমেইজ, ভিডিও চিত্র, অডিও, অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ যোগ্য।