এম.আর রুবেলঃ
ভৈরব থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) খন্দকার ফুয়াদ রুহানীর বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম ও ঘুষ দূর্নীতি অভিযোগ তুলেছেন গণ অধিকার পরিষদের নেতা ইমতিয়াজ আহমেদ কাজল।
গত বুধবার (২৯ এপ্রিল) বেলা ১১টায় ঢাকা সিলেট মহাসড়কের ভৈরব দুর্জয় মোড়ে গণ অধিকার পরিষদের উদ্যোগে আয়োজিত মানববন্ধনে ওসির নানা অনিয়ম ও ঘুষ দূর্নীতির বেশ কিছু ঘটনা নিয়ে মুখ খুলেন গণ অধিকার পরিষদ নেতা ইমতিয়াজ আহমেদ কাজল।
কিশোরগঞ্জ জেলা গণ অধিকার পরিষদের যুগ্ম আহবায়ক ও ভৈরব উপজেলা গণ অধিকার পরিষদ নেতা সংগঠক ইমতিয়াজ আহমেদ কাজল বলেন, ভৈরবের চিহ্নিত মাদক কারবারি জমসেদ মিয়া মানবপাচার মামলায় বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও শিক্ষানুরাগী দানবীর হাজি আব্দুস সাদেক মিয়া ও তাঁর মেয়ের জামাতা শামীম মিয়াকে ফাঁসানোর ষড়যন্ত্রে মিথ্যা আসামি করে তদন্ত ছাড়াই শামীম মিয়াকে গ্রেফতার করে চালান দেয়। এবিষয়ে ভুক্তভোগীর পরিবার সংবাদ সম্মেলন করেন। ওই সংবাদ সম্মেলন একজন ভালো মানুষের পক্ষে কথা বলায় তৎক্ষণিক ওসি মাদক কারবারি জমসেদ মিয়া ও তার লোকজনকে দিয়ে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করিয়ে নিজের দোষ ঢাকার চেষ্টা করেন।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, গত ২০দিন আগে অন্য একটি মানবপাচার মামলা এফআইআর করতে কোর্ট ভৈরব থানার ওসি ফুয়াদ রুহানীকে নির্দেশ দেন। ওই মামলা এফআইআর না করে ২৫ তারিখে করা মামলাটি বাদী ও ভূমিদুস্যুদের সাথে আতাঁত করে টাকার বিনিময়ে ২৭ তারিখ প্রকৃত অপরাধী কিনা যাচাই-বাছাই না করে একজন নিরপরাধ ব্যক্তিকে গ্রেফতার করে চালান দেন।
এছাড়াও ওসি ফুয়াদ রুহানী চলতি বছরের ১০ফেব্রুয়ারী, অপারেশন ডেভিল হান্টের অভিযানে উপজেলার গজারিয়া ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি ও প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান স্মৃতি সাংসদের সাধারণ সম্পাদক সাফায়েত হোসেন সম্রাটকে আটক করে থানায় ৫ ঘন্টা রাখার পর তিন লাখ টাকার বিনিময়ে ছেড়ে দেন বলেও ওসির বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন।
এছাড়াও চন্ডিবের গ্রামের এক ভুক্তভোগী নারী তার মাদকাসক্ত ছেলেকে সেফ কাস্টুরি দেয়ার জন্য ওসির সহযোগিতা নিতে গেলে ওসি পুলিশ পাঠিয়ে নিজ বাড়ি থেকে একজন কিশোরকে আটক করে থানায় এনে পুলিশের সংরক্ষিত দেশীয় অস্ত্র দিয়ে ডাকাতি মামলায় চালান দেয়। এ ঘটনায় ওই ভুক্তভোগী নারী ওসির কাছে বারবার গিয়েও কোন সূরাহ না পেয়ে বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে ওসির এই অপকর্মের ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন এবং সঠিক সমাধান চান। ভুক্তভোগী নারীর অভিযোগের একটি ভিডিও বার্তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার ওসির নৈতিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে নেটিজেনসহ সাধারণ মানুষ।
এসময় ওসির বিরুদ্ধে আরও নানান অভিযোগ করেন এই নেতা। তিনি বলেন, এই অসৎ ওসিকে যদি দ্রুত সময়ের মধ্যে ভৈরব থানা থেকে প্রত্যাহার না করা হয় তাহলে কঠোর আন্দোলনে হুমকি দেন।
ওই মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন ছাত্র ও যুব অধিকার পরিষদ ভৈরব উপজেলা শাখার সভাপতি বিন ইয়ামিন সরকার জুনাঈদ, সাধারণ সম্পাদক আবির আহমেদ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব আলম দিপু, যুব অধিকার পরিষদ উপজেলা শাখার সভাপতি অন্তর মিয়া ও সাধারণ সম্পাদক আকাশ আহমেদ প্রমুখ। এছাড়াও ভৈরব থানা পুলিশের কাছে সঠিক বিচার না পাওয়া পরিবারের সদস্যরাও মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন।
সম্রাটকে আটক করে ছেড়ে দেয়ার বিষয়ে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত ১০ ফেব্রুয়ারি, ভৈরব থানার ওসি খন্দকার ফুয়াদ রুহানীর নেতৃত্বে শহরের বিভিন্ন জায়গায় অপারেশন ডেভিল হান্ট অভিযান চালিয়ে উপজেলার গজারিয়া ইউনিয়ন ৩নং ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি সাফায়েত হোসেন সম্রাটসহ ভৈরব পৌর শহরের ১নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি আফজাল হোসেন ভূঁইয়া, ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ নেতা নান্নু মিয়া, গজারিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ কর্মী বাদল মিয়া ও শিবপুর ইউনিয়নের ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সভাপতি মুর্শিদ মিয়াকে আটক করা হয়।
অপারেশন ডেভিল হান্টের অভিযানে ৫ জনকে আটকের পর ৪ জনকে কিশোরগঞ্জ আদালতে প্রেরণ করা হলেও গজারিয়া ইউনিয়ন ৩ নং ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি সাফায়েত হোসেন সম্রাটকে ৫ ঘন্টা থানায় আটকে রেখে রহস্যজনক কারণে ছেড়ে দেয়ার অভিযোগ উঠে ওসির বিরুদ্ধে।
একটি বিশ্বস্তসূত্র জানান, জামায়েত ইসলামী একজন নেতাসহ বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কয়েকজন সমন্বয়ক ও ছাত্রদের হস্তক্ষেপে থানা থেকে ৫ ঘন্টা পর সাফায়েত হোসেন সম্রাটকে ছাড়িয়ে নেয়া হয়। আটককৃত সম্রাটকে ছাড়িয়ে নিতে মোটা অংকের টাকা রফাদফার ঘটনা ঘটেছে বলেও বিভিন্ন মহলে আলোচনা-সমালোচনা হয়।
এ ঘটনার সত্যতা জানতে, ঘটনার পরদিন ১১ ফেব্রুয়ারি মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সম্রাটের সাথে কথা হয় তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে। তিনি জানান, লক্ষ্মীপুর রোডে তার মালিকানাধীন পাদুকা দোকান থেকে তাকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। পরে তার লোকজন থানায় গেলে ৪/৫ ঘন্টা আটক রাখার পর তিনি ছাড়া পান। তিনি তার দলীয় পদের কথা স্বীকার না করলেও, তিনি আওয়ামী লীগের আমলে ডোনেশন দিতেন বলে জানান।
এ ঘটনায় গণ অধিকার পরিষদ কিশোরগঞ্জ জেলার যুগ্ম আহবায়ক ইমতিয়াজ আহমেদ কাজল ফেসবুকে পোস্ট করেন। স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা সম্রাটকে আটকের ৫ ঘন্টা পর কাদের তদবিরে ছেড়ে দেয়া হয়েছে এ বিষয়ে প্রশ্ন রাখেন।
এই পোস্ট দেখে রিয়াদ নামে বৈষম্য বিরোধী একছাত্র ১২ ফেব্রুয়ারি বুধবার বেলা তিনটার দিকে ইমতিয়াজ আহমেদ কাজলকে ফোন করে পোস্ট ডিলিট করতে অনুরোধ করেন এবং স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা সম্রাটের পক্ষে সাফাই করেন।
এবিষয়ে ১১ ফেব্রুয়ারী মঙ্গলবার রাতে ভৈরব থানার ওসি খন্দকার ফুয়াদ রুহানীর কাছে মুঠোফোনে জানতে চাইলে, তিনি তখন বলেন ডেভিল হান্টের অভিযানে সম্রাটসহ ৫জনকে আটক করা হয়েছিল। যাচাই-বাছাই করার জন্য সম্রাটকে ঘন্টা দেড়েক থানায় রাখা হয়। যাচাই-বাছাইয়ে অপরাধী মনে না হওয়ায় তাকে ছেড়ে দেয়া হয়। তবে কোন অনৈতিক রফাদফা হয়নি বলে জানিয়েছেন ওসি। এছাড়াও গণ অধিকার পরিষদ নেতার আনিত অভিযোগের বিষয়ে ভৈরব থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) খন্দকার ফুয়াদ রুহানী মুঠোফোনে বলেন, অভিযোগ যে কেউ করতে পারে।
সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত ২০২১. © হাওর টাইমস ২৪, এই ওয়েবসাইটের কোনো, লেখা, ইমেইজ, ভিডিও চিত্র, অডিও, অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ যোগ্য।