নিজস্ব প্রতিনিধিঃ

কিশোরগঞ্জের হাওর উপজেলা অষ্টগ্রামে জলমহালের দখল নিয়ে বিএনপির দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। এতে আহত হয়েছেন উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক আহবায়ক জাবেদ মাহমুদসহ উভয় পক্ষে অন্তত ৫ জন।

ঘটনাটি ঘটেছে গত রোববার (১৮ মে) সকালে। এ ঘটনায় জাবেদ মাহমুদ বাদী হয়ে ১১ জনের নামে ১৯ মে সোমবার অষ্টগ্রাম থানায় একটি মামলা করেছেন বলে জানিয়েছেন অষ্টগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রুহুল আমিন।

স্থানীয়রা জানান, অষ্টগ্রামের কাস্তুল ইউনিয়নের বাহাদুরপুর এলাকায় সবুরের ভাঙ্গা নামে একটি জলমহাল রয়েছে। এ জলমহালে বাহাদুরপুর জামে মসজিদ, কাস্তুল ইউনিয়ন পরিষদ ও স্থানীয় লোকদের মালিকানা রয়েছে। আগে ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে জলমহালটি ইজারা দেওয়া হতো। বছরে ৬০ লাখ টাকার মত পাওয়া যেত। টাকাগুলো মালিকানার অংশ অনুযায়ী ভাগ হতো। বিতাড়িত আওয়ামী দুঃশাসনের সময় লীগের সমর্থকরা ভোগদখল করা শুরু করে।

আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর অষ্টগ্রাম উপজেলা বিএনপির সভাপতি সাঈদ আহমেদের নেতৃত্বে জলমহালটি দখল হয়েছে বলে স্থানীয়রা অভিযোগ করেছিলেন। যদিও সাঈদ আহমেদ এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তবে বাহাদুরপুরের লোকজন দলমত নির্বিশেষে সকলে মিলে দখলে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছেন।

সংঘটিত সংঘর্ষের দিন উপজেলা বিএনপির সভাপতি সাঈদ আহমেদের ইঙ্গিতেই রোববার সকালে বিএনপি, যুবদল ও ছাত্রদলের নেতাসহ অষ্টগ্রম সদর ও পূর্ব অষ্টগ্রাম ইউনিয়নের শতাধিক লোক দেশীয় অস্ত্র নিয়ে মোটরসাইকেল ও অটোযোগে বাহাদুরপুর এলাকায় যান। বিষয়টি আগে থেকেই জানতে পেরে কাস্তুল ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি মারুফুজ্জামান ভূঁইয়া ও ৪ নম্বর ওয়ার্ড যুবদলের সভাপতি সুমন ভূঁইয়ার নেতৃত্বে বাহাদুরপুর এলাকার লোকজন প্রস্তুতি নিয়ে অবস্থান গ্রহণ করেন।

সাঈদ আহমেদের লোকজন বাহাদুরপুরের আনন্দবাজারে গেলে অপর পক্ষের বাধার এক পর্যায়ে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে উপজেলা বিএনপির সভাপতি সাঈদ আহমেদের লোক বলে পরিচিত উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক আহবায়ক জাবেদ মাহমুদ, বাহাদুরপুরের জোবায়ের খাঁ রুবেলসহ উভয় পক্ষে অন্তত ৫ জন আহত হন। জাবেদ অষ্টগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি আছেন। অন্যরা বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন।

এ ব্যাপারে অষ্টগ্রাম উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শাহীন আলম জানান, ঘটনার দিন আমি এলাকায় ছিলাম না। বিষয়টি আমি পরে শুনেছি। বিএনপির জন্য দখল নিয়ে সংঘর্ষ, মামলা দলীয় নেতাকর্মী আহত কিংবা আসামি হওয়া এগুলো মোটেই উচিত নয়। এসবের সাথে আমার আগে কিংবা বর্তমানেও কোন প্রকার সম্পৃক্ততা নেই। সর্বোপরি দলের দূর্নাম হোক এমন কোন কাজে জড়িত নই।

অষ্টগ্রাম উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন মুকুল সরাসরি কারও নাম উল্লেখ না করে বলেন, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ কেন্দ্র ও জেলার শীর্ষস্থানীয় নেতারা সবসময় দখল আর চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে হুশিয়ারি দিচ্ছেন। কারও বিরুদ্ধে এরকম অভিযোগ পাওয়া গেলে কঠোর ব্যবস্থারও হুশিয়ারি দিচ্ছেন। আমি নিজেও দখল চাঁদাবাজির ঘোর বিরোধী। আমার কোন অনুসারী রোববার জলমহালের মারামারিতে অংশ নেননি। মারামারির বিষয়টি আমি দলের চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ফজলুর রহমানকেও জানিয়েছি। নিজেদের মধ্যে মারামারি করে দলের বদনাম হচ্ছে, ঐক্য বিনষ্ট হচ্ছে। এখন নিজেদের দলের লোকদের নামেই মামলা হয়েছে। এটা দুঃখজনক।

তবে উপজেলা বিএনপির সভাপতি সাঈদ আহমেদ বলেন, এই জলমহালের দখলের সাথে তার কোন সম্পর্ক নেই। অনেকেই উদ্দেশ্যমূলকভাবে এসব ঘটনায় তাঁর নাম জড়িয়ে দেন। প্রকৃতপক্ষে জসিম নামে এক ব্যক্তির জমি আছে জলমহালের কাছে। তিনিই মূলত জলমহালটি এখন ইজারা দেন। বাহাদুরপুরবাসী অভিযোগ করলে জসিমের বিরুদ্ধে করতে পারেন। এর সাথে আমার কোন সম্পর্ক নেই।

মামলার বিবরনে জানা যায়, জাবেদের ওপর হামলার ঘটনায় তিনি নিজেই বাদী হয়ে ১৯ মে সোমবার ১১ জনকে আসামি করে থানায় মামলা করেছেন। প্রধান আসামি করেছেন জুবায়ের খাঁ রুবেলকে। কাস্তুল ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ড যুবদলের সভাপতি সুমন ভূঁইয়াকে করা হয়েছে চার নম্বর আসামি। এজাহারে বাদী বলেছেন, আসামিদের সাথে পূর্ব বিরোধ ছিল। বিভিন্ন সময় হুমকি দিতেন। রোববার মোটরসাইকেল দলীয় কাজে কিশোরগঞ্জ যাওয়ার পথে আনন্দবাজারে তার ওপর হামলা চালানো হয়েছে।

এবিষয়ে চার নম্বর আসামি ওয়ার্ড যুবদল সভাপতি সুমন ভূঁইয়া জানিয়েছেন, প্রধান আসামি রুবেল ঢাকায় বিএনপিতে সক্রিয় ছিলেন। আওয়ামী লীগের আমলে মামলায় পড়ে এলাকায় চলে এসেছেন। তিনিও রোববার আহত হয়েছেন। তবে এ মামলায় রোববার সন্ধ্যা পর্যন্ত কেউ গ্রেপ্তার হননি বলে ওসি রুহুল আমিন জানিয়েছেন।