কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধিঃ
কিশোরগঞ্জে বৈধ-অবৈধ ডায়াগনস্টিক সেন্টার আর ক্লিনিক-হাসপাতালের ছড়াছড়ির ফলে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের অতিরিক্ত অর্থ ব্যায় ও অপচিকিৎসাসহ নানা ভোগান্তির বেড়াজালে জিম্মী রোগীসহ রোগীর আত্বীয় স্বজনরা।
ফলে কিশোরগঞ্জে দিনের পর দিন রোগীরা বিভিন্ন ক্লিনিক-হাসপাতাল ও রোগ নির্ণয়কেন্দ্রে (ডায়াগনস্টিক সেন্টার) স্বাস্থ্যসেবা নিতে গিয়ে প্রতারণা আর অপচিকিৎসার শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। নিয়মবহির্ভূতভাবে গড়ে উঠেছে সরকারি হাসপাতালের সামনেই বিভিন্ন ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার।
সম্প্রতি সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, সরকারি হাসপাতালের সামনে, পেছনে বা পাশেই গড়ে উঠেছে ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ক্লিনিক। বিশেষ করে কিশোরগঞ্জ সদর জেনারেল হাসপাতাল ও শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পাশেই বিধিবহির্ভূতভাবে ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ছড়াছড়ি।
জেলার স্বাস্থ্য বিভাগ সুত্রে জানা গেছে, জেলায় ১৭৮ টি ডায়াগনস্টিক সেন্টার রয়েছে; যার মধ্যে লাইসেন্স নেই ১০টির। বন্ধ আছে দুটি। জেলায় ৫১টি বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিক রয়েছে; যার মধ্যে তিনটি হাসপাতাল ও ক্লিনিকের লাইসেন্স নেই। যেসব প্রতিষ্ঠান নিবন্ধনের জন্য আবেদন করেছে, এটি শুধু সেই পরিসংখ্যান।
স্থানীয় বাসিন্দা ও বেশ কয়েকজন রোগীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তালিকায় থাকা বেশির ভাগ বৈধ ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশ নেই। নেই কোয়ালিটি সম্পন্ন প্যাথলজিক্যাল পরীক্ষাগার এবং নেই স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশ।
সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী অবকাঠামোও নির্মাণ করা হয়নি। তার পরও এসব প্রতিষ্ঠান স্বাস্থ্য বিভাগের নিবন্ধন পেয়েছে, নবায়নও হচ্ছে। ফলে চিকিৎসা সেবার নামে চলছে জমজমাট ব্যবসা।
সম্প্রতি জেলা শহরের স্টেশন রোডে অবস্থিত মেঘনা ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও যমুনা ডায়াগনস্টিক এবং কনসালটেশন সেন্টারে মেয়াদোত্তীর্ণ রিএজেন্ট দিয়ে রোগ নির্ণয় পরীক্ষার দায়ে দুটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারকে ১ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। ওই দুই ডায়াগনস্টিক সেন্টারে অভিযান পরিচালনার সময় মেয়াদোত্তীর্ণ রিএজেন্ট পাওয়া যায়।
এদিকে গত বছর অস্ত্রোপচারের সময় ভুল চিকিৎসায় রুপালী আক্তার (২২) নামের এক প্রসূতির মৃত্যুর অভিযোগে বন্ধ করে দেওয়া আল-হেরা ডিজিটাল ডায়াগনস্টিক সেন্টার অ্যান্ড হসপিটালটি। ঘুরে-ফিরে এখন আবারও চালু হয়েছে।
অপরদিকে প্রতারিত রোগীদের মাঝে ভোগান্তিসহ ১ মাসে একই বেসরকারি হাসপাতালে ২ রোগীর মৃত্যুর অভিযোগ থাকলেও কোন প্রতিকার পাচ্ছে না।
স্থানীয় সিন্ডিকেটের প্রভাবশালীদের যোগ সাজশে লাখ লাখ টাকার বিনিময়ে রফাদফা হয়ে থাকে এসব ঘটনা। ফলে কোন মামলা বা তদন্তের মুখে পড়তে হয় না ক্লিনিক মালিকদের। যার ফলে বাড়ছে ক্লিনিকে চিকিৎসা জনিত মৃত্যু কিংবা অপচিকিৎসা।
অনুসন্ধানে আরো জানা যায়, গত ১ মাসে কিশোরগঞ্জ পদ্মা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে এসে সিজার জনিত অপারেশনে ২ নারীর মৃত্যু হয়েছে। তার মাঝে শোলাকিয়া এলাকার রোগী কিছু পেলেও গত ২৯ ফেব্রুয়ারী নিকলীর শান্তার পরিবারের জোটেনি কিছুই। মৃত শান্তার সিজারে জন্ম নেয়া ছেলে হারালো মা আর পরিবারের নগদ টাকাসহ হারালো শান্তাকে তবুও সেই ক্লিনিক রয়ে গেছে ধরাছোঁয়ার বাইরে বলেও অভিযোগ রয়েছে।
আবদুল্লাহ আল মামুন, সজিব হোসাইন, জহিরুল ইসলামসহ বেশ কয়েকজন রোগী জানান, দোকানের মতো ডায়াগনস্টিক সেন্টার চলছে কিশোরগঞ্জ হাসপাতালের আশপাশেই।
সুশীল সমাজের প্রতিনিধি সৈয়দ ইয়াছিন বলেন, সময় এসেছে প্রতি ক্লিনিক বা ডায়াগনস্টিক সেন্টারের দৃশ্যমান স্থানে সরকারি নীতিমালা বড় করে টানিয়ে রাখা বাধ্যতামূলক করা।
কিশোরগঞ্জ সোসাইটি অব হেলথ সার্ভিসের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. কামরুজ্জামান খুকু বলেন, ‘স্বাস্থ্যসেবার মান বৃদ্ধি এবং সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী পরিচালনা করতে গত ২৬ ফেব্রুয়ারি আমাদের সংগঠনের সভায় প্রতিটি ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও হাসপাতাল এবং ক্লিনিক মালিকদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
কিশোরগঞ্জের ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক হৃদয় রঞ্জন বণিক বলেন, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী স্বাস্থ্যসেবা খাতে সেবাগ্রহীতাদের প্রতিকার দেওয়ার এখতিয়ার খুবই সীমিত।
কিশোরগঞ্জের সিভিল সার্জন ডাঃ সাইফুল ইসলাম বলেন, আমরা মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবা দেওয়ার জন্য কাজ করে যাচ্ছি এবং এ ব্যাপারে দৃঢ়প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসনকে নিয়েই আমরা একসঙ্গে কাজ করে যাচ্ছি; যাতে মানুষকে মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবা তথা সুচিকিৎসা দেয়া যায়। আমাদের সবার জন্য স্বাস্থ্য সুরক্ষানীতি বাস্তবায়ন করতে হবে।
সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত ২০২১. © হাওর টাইমস ২৪, এই ওয়েবসাইটের কোনো, লেখা, ইমেইজ, ভিডিও চিত্র, অডিও, অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ যোগ্য।