কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধিঃ
কিশোরগঞ্জের মিঠামইন উপজেলা বিএনপির সভাপতি জাহিদুল আলম জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে কৃষকের জমির সাড়ে ৬ হাজার মণ বোরো ধান লুট ও কৃষককে মারধরের অভিযোগ উঠেছে।
এমন অভিযোগে আজ মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) জেলা শহরের রথখলা এলাকায় সংবাদ সম্মেলন করেন ভুক্তভোগী কৃষকরা।
অভিযোগ এনে কৃষক মাসুদ মিয়া বলেন, মিঠামইন হাওরে আমরা ১৩ জন কৃষক ৬৬ একর জমি আবাদ করার জন্য সাবেক রাষ্ট্রপতির ভাই আব্দুল হক নুরুর কাছ থেকে জমা নিয়েছিলাম। সেখানে বোরা ধান আবাদ করি। এক একর জমির মূল্য ১৩ হাজার টাকা। গত শুক্রবার খবর পাই বিএনপি’র নেতাকর্মীরা আমাদের জমির ধান কেটে নিয়ে যাবে। সেই খবর পাওয়ার পর থানায় গিয়ে ওসি মহোদয়কে জানালে তিনি আমাদের জমি’র কাগজ পত্র দেখতে চান। সেই মোতাবেক কাগজপত্র দাখিল করি। এরপর আমাদের ধান কাটতে সমস্যা হলে তাকে (ওসি) জানাতে বলেন। পরেরদিন শনিবার সকালে ধান কাটার জন্য মেশিন (কম্বাইন্ড হারভেস্টার) খুঁজতে বের হলে স্থানীয় একজন আমাদেরকে মোবাইল ফোনে জানান আপনাদের জমির ধান কাটার জন্য কেউ মনে হয় মেশিন লাগিয়েছে।
খবর পেয়ে আমরা ৮ জন জমির কাছে গিয়ে ধান কাটার জন্য মেশিন চালককে নিষেধ করি। কিছুক্ষনের মধ্যে উপজেলা বিএনপি’র সভাপতি জাহিদুল আলম জাহাঙ্গীর ৬টি মোটরসাইকেলে করে লোক নিয়ে গিয়ে আমাদের মারধর করে সকল জমির ধান কেটে নিয়ে যায়। তার প্রভাবে থানা, হাসপাতাল কোন জায়গায় যেতে পারিনি। থানায় যাওয়ার পথে আবারও আমরা বিএনপি’র নেতাকর্মীদের হামলার শিকার হয়েছি। পরে পালিয়ে কিশোরগঞ্জ শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছি। বর্তমানে হাসপাতালে তিনজন ভর্তি আছি। এর মধ্যে একজন ঢাকায় চিকিৎসাধীন রয়েছে। বাড়ির লোকজনকে হুমকি দিচ্ছে। জাহাঙ্গীরের সাথে আমাদের কোন শত্রুতা নেই। আমরা যার কাছ থেকে জমি নিয়েছি তার সাথে বিরোধ, সেই বিরোধের জেরে আমাদের সাথে এমনটা করা হয়েছে। প্রতি একর জমিতে জমা নেওয়াসহ আমাদের খরচ হয়েছে প্রায় ৪০ হাজার টাকা। যেখানে প্রতি একরে ১০০ মন ধান পাওয়ার আশা ছিল আমাদের। সেই অনুযায়ী ৬ হাজার ৬০০ মণ ধান হবে।
সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগের বিষয়ে মিঠামইন উপজেলা বিএনপির সভাপতি জাহেদুল আলম জাহাঙ্গীর বলেন, আমার বিরুদ্ধে আনা সকল অভিযোগ সাজানো ষড়যন্ত্র ও বানোয়াট। তিনি বলেন, সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ’র ভাই মিঠামইন উপজেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল হক নুরুই অর্থ দিয়ে এসব করাচ্ছে। যারা সংবাদ সম্মেলন করেছে তারা পত্তন (জমা) নেয়নি। জমির মালিক হলো উজানের জিরাতিগণ (নাম ঠিকানা জানা নেই)। পত্তন নিয়েছে মিঠামইনের কৃষকরা। তারা তাদের ধান কেটে নিয়েছে। তাছাড়া তাঁরা মিঠামইন থানার মামলার আসামি। জামিনে বেরিয়ে এসেই এসব নাটক শুরু করেছে।
মিঠামইন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শফিউল আলম জানান, যারা সংবাদ সম্মেলন করেছে তারা ধান কাটার আগে মৌখিকভাবে আমাকে জানালে আমি তাদেরকে বলেছিলাম একটি লিখিত অভিযোগস পত্তনের (জমার) পক্ষে যে সমস্ত কাগজপত্র আছে তা নিয়ে আমার সাথে দেখা করার জন্য। কিন্তু পরে তারা কাগজপত্র নিয়ে আমার সাথে দেখা করেনি। মারধরের বিষয়টিও আমার জানা নেই।
সংবাদ সম্মেলনে কৃষক মাসুদ মিয়া (৪০), জমির হোসেন (৪৩), কাসুম আলী (৫৫) ও নায়েব আলী(৫০) উপস্থিত ছিলেন।
সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত ২০২১. © হাওর টাইমস ২৪, এই ওয়েবসাইটের কোনো, লেখা, ইমেইজ, ভিডিও চিত্র, অডিও, অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ যোগ্য।