আরমান চৌধুরী
পেশা হিসেবে সাংবাদিকতা আজ অনেকটা গোষ্ঠীস্বার্থে নিবেদিত! আর সাংবাদিক সংগঠনগুলোর কথিত নেতারা ব্যক্তিস্বার্থে মরিয়া। ক্ষুদ্র স্বার্থে নীতি- নৈতিকতা বিসর্জন দিয়ে যারা এখন পতিত ফ্যাসিস্টদের তোয়াজ করছে।
কম্যুনিটি ও সমষ্টির বৃহৎ কল্যাণের পরিবর্তে সংগঠনকে ব্যবহার করছেন সম্পূর্ণ নিজেদের স্বার্থে। এতে সংগঠন গুলোর গৌরব, ঐতিহ্য ও সম্মান যারপরনাই ক্ষুণ্ন হচ্ছে। হচ্ছে প্রশ্নবিদ্ধ।
যার সর্বশেষ উদাহরণ জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহর অকাট্য বক্তব্য ও মন্তব্য। তিনি মৌচাকে ঢিল মারার মধ্য দিয়ে বাস্তব সত্যকে সামনে নিয়ে এসেছেন।
‘মাফিয়া’ বসুন্ধরার বিরুদ্ধে যৌক্তিক বক্তব্যকে ‘গণমাধ্যমের প্রতি হুমকি’ হিসেবে দেখানোর চেষ্টা হচ্ছে, বলেন হাসনাত আবদুল্লাহ। বিগত দিনে বসুন্ধরা গ্রুপের গণমাধ্যমগুলোর বিতর্কিত ভূমিকার পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানটির কর্ণধার আহমদ আকবার সোবহান এক অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনার পাশে দাঁড়িয়ে প্রকাশ্যে বলেছেন ‘মৃত্যুর পরও তার সঙ্গে থাকবেন’।
মিডিয়ার কল্যাণে যা দেশবাসী জেনেছে। শুরু থেকেই পতিত ফ্যাসিদের আত্মস্বীকৃত সেই দোসরের পক্ষে কতিপয় অসৎ, নীতি-আদর্শহীন সাংবাদিক নেতার অবস্থানকে ঘৃণার চোখে দেখে আসছে সাংবাদিক সমাজ।
যে বা যারা জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহর পতিত ফ্যাসিস্টদের সাংস্কৃতিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক মেশিনারির চাকা সচল হতে শুরু করেছে বলে মন্তব্যের অপব্যাখ্যা করেছেন, তারা নিজেদের অবস্থানকে পতিত ফ্যাসিস্টের দোসর হিসেবে সুদৃঢ় করেছেন।
তারা জানে না যে, দেশ ও জাতির কাছে হাসনাত আবদুল্লাহর যৌক্তিক বক্তব্য ও অবস্থান সময়ের সাহসী ও যুগোপযোগী হিসেবে ব্যাপক সমাদৃত হয়েছে। কেননা তার ক্ষুরধার মন্তব্য ও বক্তব্যের মধ্য দিয়ে চব্বিশের ছাত্র-গণআন্দোলনের চেতনার প্রতিফলন ঘটেছে। ছাত্র নেতৃত্বের কাছে এমনটাই প্রত্যাশা করে আপামর জনতা।
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহর বসুন্ধরা গ্রুপকে ‘ভূমিখেকো, বহু বছর আগে থেকে হত্যা মামলায় অভিযুক্ত ও মিডিয়া মাফিয়া’ উল্লেখ করে তিনি বলেছেন, ‘আমি আমার বক্তব্যে যা বলার স্পষ্টভাবেই বলেছি এবং এখনো আবার স্পষ্টভাবেই বলছি, আমি ভূমিখেকো, বহু বছর আগে থেকে হত্যা মামলায় অভিযুক্ত, মিডিয়া মাফিয়া বসুন্ধরা গ্রুপের কর্তৃপক্ষকে হুঁশিয়ার করেছি, যাতে তারা অভ্যুত্থানের নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে ডিজইনফরমেশন এবং হেট (অপতথ্য ও ঘৃণা) ছড়ানো বন্ধ করে এবং পেশাদার সাংবাদিকতায় মনোযোগ দেয়।তবে কোথাও তিনি ‘আমি বাংলাদেশের স্বাধীন মিডিয়াকে কোনো হুমকি কখনো দেননি, বরং আমি স্বাধীন মিডিয়ার পক্ষে একজন অ্যাডভোকেট (সোচ্চার ব্যক্তি)। কিন্তু স্বাধীনতার নামে ফ্যাসিবাদের দোসরদের প্ল্যাটফর্ম দেওয়া এবং যে কারও বিরুদ্ধে ডিজইনফরমেশন ছড়ানো হলে তা মেনে নেওয়া হবে না।
হাসনাত আবদুল্লাহর উল্লিখিত প্রমাণিত সত্য বক্তব্যে এটা সম্পষ্ট যে তিনি স্বাধীন সাংবাদিকতায় বিশ্বাস করেন। তিনি নিজে এ ব্যাপারে সব সময় সোচ্চার। যদিও বসুন্ধরার কাছে অর্থের বিনিময়ে আত্মসমর্পণকারী কথিত সাংবাদিক নেতারা তার বক্তব্যের অপব্যাখ্যা করে জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি হাসান হাফিজ ও সাধারণ সম্পাদক আইয়ূব ভূঁইয়া।
এ প্রসঙ্গে এনসিপি নেতা হাসনাত আবদুল্লাহ ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, “একটি মাফিয়া গ্রুপের বিরুদ্ধে আমার এই যৌক্তিক বক্তব্য ও অবস্থানকে ‘মিডিয়ার প্রতি হুমকি’ হিসেবে দেখাতে উঠেপড়ে লেগেছেন ৫ আগস্টের পর ওই মিডিয়া গ্রুপে চাকরি পাওয়া এমন কিছু সাংবাদিক, যাদের চব্বিশের অভ্যুত্থানের পক্ষের শক্তি হিসেবেই আমরা জানতাম।
৫ আগস্টের পর মিডিয়া মাফিয়া গ্রুপটির অবৈধ টাকার কাছে আত্মা বিক্রি করে দেওয়া ওই সাংবাদিকেরা জাতীয় প্রেসক্লাবে থাকা তাঁদের পদবি ব্যবহার করে বসুন্ধরার পক্ষে এমন বিবৃতি দিচ্ছেন, যেখানে আমার বক্তব্যকে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে।
জুলাই-আগস্টে যখন দেড় হাজারের বেশি ছাত্র-জনতাকে গুলি করে পুলিশ হত্যা করছিল, তখন জাতীয় প্রেসক্লাবের নেতারা সেই গণহত্যার নিন্দা করে কোনো বিবৃতি দিয়েছিলেন কি না, সেই মিলিয়ন ডলার প্রশ্ন করেছেন হাসনাত আবদুল্লাহ।
তিনি বলেন, ‘জাতীয় প্রেসক্লাবের যে নেতারা আমার বক্তব্যকে বিকৃত করে বিবৃতি দিলেন, তাঁরা কি কখনো বসুন্ধরা গ্রুপের মাফিয়া মিডিয়া আউটলেটগুলোর ছড়ানো ভুয়া খবরের নিন্দা করে বিবৃতি দিয়েছিলেন? চব্বিশের গণহত্যায় উসকানিদাতা এই মিডিয়া গ্রুপের অপকর্মের নিন্দা করেছিলেন কখনো? বর্তমান যে নেতারা বিবৃতি দিচ্ছেন, তাঁরা দায়িত্ব নেওয়ার (অনির্বাচিতভাবে) পর বাংলাদেশের গণমাধ্যমকে ফ্যাসিবাদের দোসরদের কবল থেকে মুক্ত করতে কোনো পদক্ষেপ নিয়েছিলেন, নাকি শুধু নিজেরা কিছু পদ দখল করে আগের ফ্যাসিস্ট এনাবলার ও মাফিয়াদের সঙ্গে যোগসাজশ করে নিজেদের পকেট ভারী করতে ব্যস্ত হয়েছেন?
সর্বেশেষ পোস্টের শেষে হাসনাত আবদুল্লাহ লিখেছেন, ‘বাংলাদেশের মানুষের জন্য অত্যন্ত লজ্জা ও দুঃখের বিষয় হচ্ছে, বসুন্ধরার মাফিয়া মিডিয়ার অপকর্মের পক্ষে দাঁড়াতে অভ্যুত্থানের নেতাদের বিরুদ্ধে বিবৃতি দিয়ে কিছু সাংবাদিক ও গণমাধ্যমকর্মী ফ্যাসিস্ট আওয়ামী খুনিদেরও বুদ্ধিবৃত্তিক ও সাংস্কৃতিকভাবে শক্তিশালী করছেন, যাঁরা একসময় আওয়ামী ফ্যাসিবাদের ভুক্তভোগী ছিলেন। আমি এ বিষয়টিতে আমার উদ্বেগ জানিয়ে রাখলাম। একই সঙ্গে ফ্যাসিস্টদের সাংস্কৃতিক ফ্রন্টকে শক্তিশালী করে তুলতে তথাকথিত সাংবাদিক নেতাদের ভূমিকার নিন্দা জানিয়ে রাখলাম।
ছাত্রনেতা হাসানাত আবদুল্লাহর বক্তব্য ও মন্তব্যে থলের বিড়াল বেরিয়ে এসেছে। মুখোশ অনেকটাস উন্মোচন হয়েছে। এরা এভাবেই সাংবাদিকদের মর্যাদা ও গর্বের প্রতিষ্ঠানকে নিজের আখের গোছানোর কাজে নির্লজ্জভাবে ব্যবহার করছে। তারা ইচ্ছেমতো এটিকে কাজে লাগায়। তারা কদিন আগে স্বৈরাচারের দোসর সাবেক এমপি সালমা ইসলামের জাতীয় প্রেস ক্লাবের সদস্য পদ ফিরিয়ে দেয়। মইন উ আহমেদের প্রিয় মানুষ ও ১৯৮৬ সালের পহেলা বৈশাখ বঙ্গভবনে দুই নেত্রীকে নিয়ে কুৎসিত কবিতা পাঠকারী কবি আবদুল হাই শিকদারের দৈনিক যুগান্তরের চাকরি পাকাপোক্ত করার জন্য যা করা হয়। এভাবে তারা জাতীয় প্রেস ক্লাবকে বানরের পিঠা বণ্টনের মতো যাচ্ছে-তাইভাবে ব্যবহার করছে।
জাতীয় প্রেস ক্লাব বর্তমানে একটি মাফিয়া চক্রের হাতে জিম্মি। এখানে নির্বাচনের যৌক্তিক কথা বলে মব জাস্টিসের শিকার হন সিনিয়র কজন সাংবাদিক। নির্বাচনের পক্ষে অবস্থান নেওয়ায় গাঁজাখুরি কায়দায় তাদের সদস্য পদ কেড়ে নেওয়া হয়। সৃষ্টি থেকে এ পর্যন্ত এ প্রতিষ্ঠানটি কখনো নির্বাচনের বাইরে ছিল না। মার্শা’ল, জরুরি অবস্থা ও বাকশালী আমলেও প্রতি দুই বছর পর পর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতো। যদিও বর্তমান ফ্যাসিবাদের দোসর কমিটি নির্বাচন না দিয়ে নয়ছয় করে ক্ষমতা কুক্ষিগত করে বসে আছে! ফলে দাবি উঠেছে এখানে প্রশাসক বসানোর।
জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আইয়ুক ভূইয়া ছাত্র হত্যা মামলার আসামী। হত্যাকে উসকে দিতে তিনি সরাসরি ভূমিকা রাখেন বলে মামলার এজহারে প্রকাশ। অথচ তিনি ধরা-ছোঁয়ার বাইরে! সভাপতি হাসান হাফিজ পতিত ফ্যাসিবাদের দোসর বসুন্ধার মিডিয়ায় কর্মরত। এরা যতদিন জাতীয় প্রেস ক্লাবের দায়িত্ব থাকবেন ততদিন এ জাতীয় প্রতিষ্ঠানটি গর্বে মাথা উঁচু করে না দাঁড়িয়ে কলঙ্কের বোঝা বহন করে ডুবতেই থাকবে। যে কারণে জাতীয় প্রেস ক্লাবকে ফ্যাসিবাদ মুক্ত করতে জরুরি ভিত্তিতে নির্বাচনের মাধ্যমে এখানে সাংবাদিকদের প্রকৃত প্রতিনিধি বসানো সময়ের দাবিতে পরিণত। সেধাবী, সৎ ও সাহসী সাংবাদিকরা মর্যাদার এ প্রতিষ্ঠানটিকে স্বৈরাচারের দোসর মুক্ত দেখতে চান।
সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত ২০২১. © হাওর টাইমস ২৪, এই ওয়েবসাইটের কোনো, লেখা, ইমেইজ, ভিডিও চিত্র, অডিও, অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ যোগ্য।