নিজস্ব প্রতিনিধিঃ

কিশোরগঞ্জ শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে ভুল চিকিৎসায় আবারো এক রোগীর মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে।

সোমবার (১০ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে এ ঘটনা ঘটে। মৃত বিনয় বিহারী সেন (৫৫) কিশোরগঞ্জ পৌর শহরের সতাল এলাকার মৃত নয়ন বিহারী সেনের ছেলে।

নিহতের স্বজনরা জানায়, রোববার (৯ ফেব্রুয়ারি) দিবাগত রাত ১টায় হৃদরোগের চিকিৎসা নিতে শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের কার্ডিওলজি বিভাগে ভর্তি হন বিনয় বিহারী সেন। ভর্তির পর চিকিৎসায় কিছুটা সুস্থ্য হন। সোমবার (১০ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় কর্তব্যরত একজন সিনিয়র স্টাফ নার্স বিনয় সেনকে ইনজেকশন পুশ করেন। ইনজেকশন পুশ করার সাথে সাথে খিচুনী উঠে এবং মুখে লালা চলে আসে। এ অবস্থায় ২ থেকে ৩ মিনিটের মধ্যেই মারা যান বিনয় বিহারী সেন।

হাসপাতাল সুত্রে জানা যায়, এই ঘটনার পর রোগীর স্বজন ও বিক্ষুব্ধ জনতা হাসপাতালে ভাঙচুর চালান। বিষয়টি জানার পর পুলিশ, র‌্যাব ও সেনাবাহিনী হাসপাতালে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

নিহতের ছেলে হৃদয় সেন ও প্রণয় সেন বলেন, ১৫ দিন আগে ঢাকা থেকে বাবাকে হৃদরোগের চিকিৎসা শেষে বাসায় নিয়ে আসি। রোববার বাবার শারীরিক অবস্থা আবার কিছুটা অবনতি হলে প্রাইভেট চিকিৎসার জন্য ডা. মজিবুর রহমানের কাছে নিয়ে যাই। তিনি উন্নত চিকিৎসার জন্য কিশোরগঞ্জ শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে পাঠান। সেখানে ভর্তি করার পর বেশ কয়েকটা পরীক্ষা করিয়েছি। সেখানে চিকিৎসা শেষে কিছুটা সুস্থ হন বাবা।

সন্ধ্যায় হাসপাতালের কর্তব্যরত নার্স এসে আমার বাবার শরীরে ইনজেকশন পুশ করেন। যা আগে থেকেই সিরিঞ্জে ঔষধ ভরে তিনি নিয়ে এসেছিলেন। ইনজেকশন পুশ করার পর ২ থেকে আড়াই মিনিটের মধ্যে বাবা মারা যান। ডাক্তার ও নার্সের কাছে বার বার জানতে চাওয়া হলেও তারা কোনো উত্তর না দিয়ে পালিয়ে যান। এমনকি চিকিৎসার যে নথিপত্র দেওয়া হয়েছিল সেটিও মুহুর্তেই গায়েব হয়ে যায়।

বাবা মারা যাওয়ার পর সব নার্স ও চিকিৎসকরা পালিয়ে যান। কর্তব্যরত নার্স আমার বাবার শরীরে কী ইনজেকশন পুশ করেছিলো তা আমরা জানতে পারিনাই। আমাদের ধারণা আমার বাবার শরীরে ভুল ইনজেকশন পুশ করা হয়েছিলো, ফলে বারার মৃত্যু হয়েছে ।

নিহতের ছেলেরা বলেন, হাসপাতালের উর্ধ্বতন মহল আমাদের নিয়ে রাতেই বসেছিলেন। প্রায় রাত আড়াইটা পর্যন্ত আলোচনা হয়। আলোচনায় বলেন এ বিষয়ে পরেরদিন তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে কিন্তু লাশ পোষ্টমরডেম করতে হবে এবং বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তখন আমরা বলি আমাদের ধর্মে লাশ কাটা-ছেড়ার নিয়ম নেই তারপর কর্তৃপক্ষ বললো তাহলে তোমাদের লিখিত দিতে হবে যে, তোমাদের বাবার স্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে এ বিষয়ে কোন অভিযোগ নেই। এমনকি বর্তমানে এবং ভবিষতে এ বিষয়ে কোনো মামলা করতে পারবানা।

সকল সন্তানরাই চায় তার বাবার শেষ কার্যটা সুন্দরভাবে করার জন্য। আমরা অপারক হয়ে লিখিত দিয়ে আমার বাবার লাশ নিয়ে আসি। আমরা স্বেচ্ছায় লিখিত দেইনি, পরিস্থিতির স্বীকার হয়ে লিখিত দিতে বাধ্য হয়েছি। আমরা আমাদের বাবার হত্যার বিচার চাই।

এ বিষয় কিশোরগঞ্জে জোড় গুনঞ্জন চলছে হাসপাতালের ভিতরের একটি চক্র অন্য একটি বেসরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালকে সুবিধা পাইয়ে দিতে এবং প্রাইভেট হাসপাতাল গুলোকে ব্যবসার সুযোগ করে দিতে পরিকল্পিত এসব ষড়যন্ত্র করে রোগীদের ভিতর আতন্ক সৃষ্টির অংশ কিনা বিষয়টি অধিকতর তদন্তের দাবি জানিয়েছেন। অন্য একটি সুত্রের অভিযোগ বর্তমান পরিচালক দায়িত্ব নেওয়ার পর এক মাসেই পর পর তিনটি ইনজেকশনে মৃত্যু নিয়ে ধূম্রজাল সৃষ্টিরও অধিকতর তদন্তের দাবি জানিয়েছে।

কিশোরগঞ্জ শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের উপপরিচালক ডা. হেলিশ রঞ্জন সরকার বার বার ভুল ইনজেকশন প্রয়োগে রোগীর মৃত্যুর অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, বিনয় সেনের স্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে।

আগে থেকে তিনি হার্টে এবং ফুসফুসে মারাক্তভাবে আক্রান্ত ছিলেন। এ অবস্থায় তিনি আমাদের এখানে ভর্তি হন। কর্তব্যরত সিস্টার ঐ রোগের ইনজেকশন প্রয়োগ করতে গিয়ে রোগী মারা যায়। এ বিষয়ে পরিবারের লোকজনদের সাথে দফায় দফায় আলোচনা করার পর শেষ গিয়ে তারা বুঝতে পারে বিনয় সেনের মৃত্যুটি স্বাভাবিক। পরিবারের লোক স্বাভাবিক মুত্যুর পক্ষে লিখিত দিয়ে গিয়েছে।