মোঃখায়রুল ইসলাম ভূইয়াঃ
কিশোরগঞ্জে হাওরের তিন উপজেলায় চলছে পুরোদমে বোরো ধান কাটার মহোউৎসব। বিভিন্ন হাওর ঘুরে দেখা গেছে, প্রায় সব জায়গাতেই ধান কাটার মহোৎসব চলছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবং রোগবালাই কম থাকায় ধানের ফলনও হয়েছে ভালো। যেদিকে দৃষ্টি যায় শুধু ধান আর ধান। এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি থেকেই পুরোদমে বোরো ধান কাটার ধুম পড়ে গেছে। বুক ভরা স্বপ্ন নিয়ে সোনার ফসল গোলায় তুলতে ব্যস্ত কৃষক। মনে হয় যেন ধান কাটার উৎসবে মেতে উঠেছে হাওরের কৃষকরা।
এ বছর কৃষি বিভাগও ৮০ শতাংশ পাকলেই কাটার তাগিদ দিয়ে যাচ্ছেন কৃষকদের। ফলে ৭/৮ দিন ধরেই ধান কাটছেন চাষিরা। তাদের ভাষা, ২০১৭ সালের ভয়াবহ বন্যায় কিশোরগঞ্জের বিস্তীর্ণ হাওরের বোরো ধান তলিয়ে নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। সেই অভিজ্ঞতা থেকে বন্যার আশঙ্কায় আগেভাগে তারা ধান কেটে ফেলেন। যদিও আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে ভারি বৃষ্টিপাত কিংবা বন্যা পরিস্থিতির কোনো পূর্বাভাস নেই।
সরেজমিন কিশোরগঞ্জ জেলার ইটনার বড় হাওর, জয়সিদ্দির হাওর, মৃগার হাওরসহ বিস্তীর্ণ এলাকায় ও শ্রমিকদের ধান কাটতে দেখা যাচ্ছে।ইটনার বড়িবাড়ি হাওরের জিরাতি কৃষক তাইজুল মিয়া বলেন, জিরাতিরা
বাড়িঘর ফেলে খড়কুটো বা টিন দিয়ে কুঁড়েঘর করে হাওরের মাঝখানে বছরের প্রায় অর্ধেক সময় কাটিয়ে তাদের পরিশ্রমেই কৃষকের গোলা ধানে ভরে ওঠে।
উপজেলার কামালপুর গ্রামের কৃষক শুকুর আলী জানান, হাওরে পানি না আসায় তারা খুশি। আর কিছুদিন পেলে সব ধান কাটা শেষ হবে। ছিলনীর হাওরে মাঠেই ভিজা ধান প্রতিমণ ৯০০ টাকা করে বিক্রি করছেন কৃষকরা।
মিঠামইনের ঢাকীর কৃষক আতাউর রহমান জানান, শ্রমিক সংকটে ধান কাটা বিঘ্নিত হচ্ছে তবে ১৫ দিন পেলে হাওরের সব ধান কাটা হয়ে যাবে। অষ্টগ্রামের কৃষক রফিকুল ইসলাম বলেন, এ পর্যন্ত জেলার অষ্টগ্রাম উপজেলার প্রায় ৪০ শতাংশের মত ধান কাটা হয়েছে।
কিশোরগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মতিউর রহমান জানান, আগামী ১০ দিন পর বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হবে এমন তথ্য এখন বলা যাচ্ছে না। তবে এ সময়ে ভারী বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস নেই। ফলে হাওরের সিংহভাগ ধান নির্বিঘ্নে কাটা হয়ে যাবে বলে মনে করছেন তিনি।
বোরো ধান কাটা শুরু হতো কিন্তু বন্যা থেকে সুরক্ষায় আগাম জাতের ধান আবাদের ফলে এখন চৈত্রের শেষ দিকেই ধান কাটা শুরু হয়। গত মঙ্গলবার করিমগঞ্জ-ইটনার সীমান্তবর্তী হাওরে শ্রমিকদের আগাম জাতের ‘ব্রি-২৮’ ও হাইব্রিড ‘হীরা’ ধান কাটতে দেখা যায়।
এসব ধান খলায় নিয়ে “বোমা মেশিনে’ মাড়াই করা হচ্ছে। মিঠামইনের ঘাগরার কৃষক আলফাজ উদ্দিন জানান, ৫০ শতাংশ জমির ধান কেটে তিনি নদীর পাড়ে খলায় বোমা মেশিনে মাড়াই করেছেন। উপজেলার গোপদীঘির গ্রামের কৃষক রহিম মিয়া জানান, এবার ১০ বিঘা জমিতে তিনি ব্রি-২৯ ও হীরা আবাদ করে ভালো ফলন পেয়েছেন।
এ ব্যাপারে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক মোঃ আব্দুস ছাত্তার জানান, এ বছর কিশোরগঞ্জে ১ লাখ ৬৭ হাজার ১০০ হেক্টর জমিতে বোরো ধান আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে শুধু হাওরেই আবাদ হয়েছে ১ লাখ ৩ হাজার ৬২০ হেক্টর জমিতে বুরো আবাদ হয়েছে। ফলনও হয়েছে ভালো। তাই হাওরের পাকা ধান দ্রুততার সঙ্গে কাটার জন্য কৃষি মন্ত্রণালয় শ্রমিক সংকটের বিকল্প হিসেবে কৃষকদের প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছে। ধান কাটার যন্ত্র কম্বাইন হারভেস্টার ও রিপার মেশিন (ধান কাটার মেশিন) পর্যাপ্ত বরাদ্দ দিয়েছে। কিশোরগঞ্জের হাওরে ৩৯৭ টি কম্বাইন হারভেস্টার ও রিপার মেশিনে ১৬ হাজার শ্রমিক বুরোধান কাটতে অংশ গ্রহণ করছে।
সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত ২০২১. © হাওর টাইমস ২৪, এই ওয়েবসাইটের কোনো, লেখা, ইমেইজ, ভিডিও চিত্র, অডিও, অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ যোগ্য।