বিশেষ প্রতিনিধিঃ
বাংলাদেশের ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ একটি অধ্যায় হিসেবে বিবেচিত ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান’ নিয়ে এবার সরকারি স্বীকৃতি পেলেন শহীদ পরিবার এবং আহত আন্দোলনকারীরা। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর সরকার ‘জুলাই শহীদ’ ও ‘জুলাই যোদ্ধা’দের স্বীকৃতি দিতে একটি অধ্যাদেশ জারি করেছে। নতুন এই আইন শুধু সম্মান জানাতেই নয়, বরং কল্যাণ ও পুনর্বাসনের বিষয়েও একটি কাঠামো নির্ধারণ করেছে।
২০২৫ সালের এই অধ্যাদেশটির নাম- ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদ পরিবার এবং জুলাই যোদ্ধাদের কল্যাণ ও পুনর্বাসন অধ্যাদেশ, ২০২৫’। সরকার এ অধ্যাদেশ জারি করেছে ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থানে’ শহীদদের ‘জুলাই শহীদ’ এবং আহতদের ‘জুলাই যোদ্ধা’ হিসেবে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি প্রদানের লক্ষ্যে। একই সঙ্গে তাদের চিকিৎসা, শিক্ষা, কর্মসংস্থান, পুনর্বাসন ও আর্থিক সহায়তার কথা এতে উল্লেখ করা হয়েছে। এতে প্রতারণার মাধ্যমে কেউ এসব সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করলে তার জন্য দণ্ডের বিধানও যুক্ত করা হয়েছে।
এই অধ্যাদেশ অনুযায়ী, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহত ব্যক্তিদের তিনটি শ্রেণিতে ভাগ করা হয়েছে এবং শহীদদের পরিবারের সদস্যদের জন্য নানা সুযোগ -সুবিধা নির্ধারণ করা হয়েছে। যারা এই সুযোগ গ্রহণের উদ্দেশ্যে মিথ্যা তথ্য, বিকৃত দলিল বা বিভ্রান্তিকর তথ্য দিয়ে নিজেকে ‘জুলাই শহীদ’ পরিবারের সদস্য বা ‘আহত যোদ্ধা’ হিসেবে দাবি করবেন- তাদের জন্য সর্বোচ্চ দুই বছর কারাদণ্ড এবং দুই লাখ টাকা জরিমানা বা গৃহীত সুবিধার দ্বিগুণ অর্থ ফেরতের বিধান রাখা হয়েছে।
অধ্যাদেশে আরও বলা হয়েছে, এই প্রতারণা ইচ্ছাকৃত ও সচেতনভাবে করা হয়েছে বলে প্রমাণিত হলে অপরাধী হিসেবে গণ্য হবেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি। এক্ষেত্রে শুধু কারাদণ্ড নয়, সঙ্গে আর্থিক দণ্ডও অপরিহার্য হবে। এতে শহীদদের সম্মান রক্ষা এবং প্রকৃত উপকারভোগীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কড়াকড়ি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
পুনর্বাসন ও কল্যাণের অংশ হিসেবে সরকার নিয়োগ, প্রশিক্ষণ, চিকিৎসা ও সহজ শর্তে ঋণ সুবিধা প্রদানের ঘোষণা দিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে-শিক্ষা বা কর্মসংস্থান সৃষ্টি, দক্ষতা অনুযায়ী প্রশিক্ষণ, যোগ্যতা অনুযায়ী চাকরি, আত্মকর্মসংস্থানের লক্ষ্যে সহজ শর্তে ঋণ প্রদান এবং প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সহায়তা। শহীদ পরিবারের একাধিক সদস্য এবং আহত যোদ্ধারা এসব সুবিধা পাবেন বলে জানানো হয়েছে।
এই অধ্যাদেশে শুধু পুনর্বাসনই নয়, রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে ইতিহাসের প্রতি দায়বদ্ধতা প্রকাশ পেয়েছে। জুলাই গণঅভ্যুত্থান’র শহীদদের সম্মানিত করে এবং জীবিত আহতদের পাশে দাঁড়িয়ে সরকার এক গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দিয়েছে-যে, কোনো আন্দোলনের ত্যাগ বৃথা যায় না। এটি শুধু আইনগত স্বীকৃতি নয়, বরং ইতিহাসে দায়মুক্তির অবসান। রাষ্ট্রীয়ভাবে এই স্বীকৃতি ভবিষ্যতের গণআন্দোলন ও সামাজিক ন্যায়ের পথকে আরও সুসংহত করবে।
সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত ২০২১. © হাওর টাইমস ২৪, এই ওয়েবসাইটের কোনো, লেখা, ইমেইজ, ভিডিও চিত্র, অডিও, অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ যোগ্য।