কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধিঃ
কিশোরগঞ্জে নিখোঁজ ছাত্রলীগ নেতা মুখলেছ ভূঁইয়া (২৫)’র ২৫ দিন পর অর্ধগলিত মাথাবিহীন লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ।
মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) বিকালে কিশোরগঞ্জ শহরের গুরুদয়াল সরকারি কলেজ সংলগ্ন নরসুন্দা নদী থেকে গ্রেপ্তার কৃত আসামি মিজান শেখের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।
এর আগে মুখলেছের পরিহিত লুঙ্গি, বাসার চাবি ও হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ছুরি উদ্ধার করা হয়। লাশ উদ্ধার হলেও এখন পর্যন্ত মাথা পাওয়া যায়নি।
পুলিশ জানিয়েছে, সোমবার সকালে আসামি মিজানের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরিদলের সহায়তায় দুই দিন ধরে নরসুন্দা নদীতে উদ্ধার অভিযান চালানো হয়। কিন্তু প্রথমদিন লাশের সন্ধান পাওয়া যায়নি। তবে গতকাল বিকালে নদীতে থাকা কচুরি পানার ভেতর থেকে শরীরে সিমেন্টের ব্লক বাঁধা অবস্থায় ছাত্রলীগ নেতার লাশ পাওয়া যায়। এ সময় পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাসেল শেখসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন।
জানা গেছে, মো. মুখলেছ উদ্দিন কিশোরগঞ্জের হাওর উপজেলা মিঠামইনের কেওয়ারজুর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। তিনি একই ইউনিয়নের ফুলপুর গ্রামের মকবুল হোসেনের ছেলে। গুরুদয়াল সরকারি কলেজ থেকে সম্প্রতি বাংলা বিভাগে মাস্টার্স সম্পন্ন করে জেলা আদালতের আইনজীবী সহকারী হিসেবে কাজ শিখছিলেন।
মুখলেছ উদ্দিনের বড় ভাই মিজানুর রহমান বলেন, ‘তিন মাস ধরে আমার ভাই কিশোরগঞ্জ শহরের হারুয়া বউবাজার এলাকার চুন্নু মিয়ার বাসায় ভাড়ায় থাকতেন। ২৯ মার্চ ভাড়া বাসা থেকে আনুমানিক রাত ৯টার দিকে নিখোজ হয়। তার সর্বশেষ অবস্থান রাস্তার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজে শনাক্ত হয়। ততে তার সঙ্গে কয়েকজনকে দেখা যায়।’ তার ধারণা, তারাই তাকে অপহরণ করে মেরে ফেলেছেন। পরে সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজের সূত্র ধরে মুখলেছ নিখোঁজের ঘটনায় পুলিশ গত শনিবার (২০ এপ্রিল) সিলেটের শায়েস্তাগঞ্জ থেকে চারজনকে আটক করে। তারা হলেন মুখলেছের বন্ধু মিঠামইনের ফুলপুর গ্রামের মিজান শেখ (২৮), তার দুই ভাই মারজান শেখ (২৬), রায়হান শেখ (২১) ও তাদের পিতা সেফুল শেখ (৬৫)। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে মুখলেছকে হত্যার কথা স্বীকার করে মরদেহ নরসুন্দা নদীতে ফেলে দেওয়ার কথা জানায় মিজান। পরে মিজানকে সঙ্গে নিয়ে তার দেখানো স্থানে তল্লাশি চালিয়ে মরদেহ উদ্ধার করে। ময়না তদন্তের জন্য মরদেহ শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে।
মুখলেছ উদ্দিনের বড় ভাই মিজানুর বলেন, ‘আমরা এলাকার সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করি। মুখলেছ যে বাসায় থাকত তার কাছাকাছি একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ফুটেজে দেখা গেছে ২৯ মার্চ রাত ৯টা ৪৪ মিনিটে মুখলেছ হেঁটে বাসায় ফিরছে। কিছুটা দূরত্ব বজায় রেখে পেছন থেকে হেঁটে আসছে একই গ্রামের মিজান। অথচ মিজান হারুয়ায় থাকে না। কিছুদিন আগে ওই যুবকের (মিজান) গোষ্ঠীর সঙ্গে মুখলেছ গোষ্ঠীর মারামারি হয়। এজন্য ধারণা করি, মিজানই মুখলেছের অপহরণে জড়িত।
মুখলেছের বড়ভাই আরও জানান, আসামি মিজান প্রায় এক বছর আগে মুখলেছের কাছ থেকে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা ঋণ নিয়েছিল। তাছাড়া বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তাদের মধ্যে মামলাও চলে আসছে। এসব বিষয় নিয়েই মিজান মুখলেছকে হত্যা করে থাকতে পারে বলে তার ধারণা। এদিকে মুখলেছ নিখোঁজ হওয়ায় মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়েন তার বাবা মকবুল হোসেন। এক পর্যায়ে গত ১৩ এপ্রিল স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে মারা যান তার বাবা।
কিশোরগঞ্জ মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ গোলাম মোস্তফা বলেন, সোমবার থেকে উদ্ধার অভিযান চলছিল। মঙ্গলবার বিকাল ৪টার দিকে নদী থেকে ভাসমান অবস্থায় অর্ধগলিত লাশ পাওয়া যায়। লাশ ময়নাতদন্তের জন্য সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাসেল শেখ গণমাধ্যমকে বলেন, মুখলেছকে হত্যা করে শরীরে ব্লক বেঁধে ব্রিজের নিচে নরসুন্দা নদীতে ফেলে দেয় আসামিরা। মুখলেছ নিখোঁজ হওয়ার পর ৩১ মার্চ থানায় জিডি এবং ১৬ এপ্রিল অপহরণ মামলা করা হয়। পরে সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা করে ২০ এপ্রিল সিলেট থেকে মিজানকে গ্রেপ্তার করা হয়। যে ছুরি দিয়ে জবাই করা হয়েছে সেটিও উদ্ধার করা হয়েছে।
তিনি বলেন, সার্বিক বিষয় পর্যালোচনা করে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে। লাশ বিকৃত হয়ে যাওয়ায় অধিকতর নিশ্চিত হওয়ার জন্য ডিঅক্সিরাইবো নিউক্লিক অ্যাসিড (ডিএনএ) পরীক্ষা করা হবে। আটকদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।
সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত ২০২১. © হাওর টাইমস ২৪, এই ওয়েবসাইটের কোনো, লেখা, ইমেইজ, ভিডিও চিত্র, অডিও, অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ যোগ্য।